
ডেটা কমিউনিকেশনের মাধ্যম
ডেটা আদান-প্রদানের জন্য প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের প্রয়োজন হয়। এই সংযোগকে চ্যানেল বা মাধ্যম বলে। এই মাধ্যম দুই ধরণের হতে পারে। যেমনঃ
১। গাইডেড মিডিয়া বা তার মাধ্যম বা ক্যবল মাধ্যমঃ তার মাধ্যম আবার তিন ধরণের। যেমনঃ
ক) টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল (Twisted Pair Cable)
খ) কো-এক্সিয়েল ক্যাবল (Co-axial Cable)
গ) অপটিক্যাল ফাইবার বা ফাইবার অপটিক ক্যাবল (Fiber Optic Cable)
২। আনগাইডেড মিডিয়া বা তারবিহীন মাধ্যমঃ তারবিহীন মাধ্যম আবার তিন ধরণের। যেমন:
ক) রেডিও ওয়েব (Radio Wave)
খ) মাইক্রোওয়েভ (Micro Wave)
গ) ইনফ্রারেড (Infrared
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের মধ্যে দিয়ে তড়িৎ সিগন্যাল ট্রান্সমিট করার জন্য দুটি পরিবাহী কপার বা তামার তারকে একই অক্ষে পরস্পর সমভাবে পেঁচিয়ে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল তৈরি করা হয়। পেঁচানো তার দুটিকে পৃথক রাখার জন্য এদের মাঝে অপরিবাহী পদার্থ হিসেবে প্ল্যাস্টিকের আস্তরণ ব্যবহার করা হয়। তড়িৎ চৌম্বকীয় প্রভাব(EMI) ও রেডিও তরঙ্গের প্রভাব(RFI) দূর করার জন্য প্রতি জোড়া তারে প্রতি ইঞ্চিতে ৩টি পূর্ণ টুইস্ট বা প্যাচ থাকে। এই ধরনের ক্যাবলে সাধারণত মোট ৪ জোড়া তার ব্যবহার করা হয়। ৪ জোড়া তারের প্রতি জোড়ায় একটি কমন (সাদা) রঙের তার এবং একটি ভিন্ন রঙের (কমলা, সবুজ, নীল, বাদামী) তার থাকে। কালার কোডিংএর জন্য প্রতি জোড়ায় একটি সাদা ও অন্য একটি ভিন্ন রঙের তার থাকে। ক্রশটক কমানোর জন্য চার জোড়া তারে মিটার প্রতি টুইস্টের সংখ্যা ভিন্নতা থাকে। RJ45 কানেক্টর দিয়ে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের কানেকশন দেওয়া হয়।

শিল্ডের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল দুই প্রকার। যথাঃ
১। ইউটিপি (Unshielded Twisted Pair-UTP)ঃ আনশিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলে ডেটাকে নয়েজ থেকে সুরক্ষার জন্য প্রতি জোড়া তার এলুমিনিয়াম ফয়েল ও প্রটেকটিভ কপার শিল্ডিং দ্বারা আবৃত থাকে না।
ব্যান্ডউইথ ঃ ১০ Mbps
ট্রান্সমিশন ডিসটেন্স ঃ ১৫৫ মিটার (রিপিটার ছাড়া)
২। এসটিপি (Shielded Twisted Pair-STP)ঃ শিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলে ডেটাকে নয়েজ থেকে সুরক্ষার জন্য প্রতি জোড়া তার এলুমিনিয়াম ফয়েল ও প্রটেকটিভ কপার শিল্ডিং দ্বারা আবৃত থাকে।
ব্যান্ডউইথ ঃ ১৬ Mbps তবে ৫০০ Mbps হতে পারে
ট্রান্সমিশন ডিসটেন্স ঃ ১০০ মিটার

টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের সুবিধাসমূহঃ
১। টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল দামে খুবই সস্তা এবং ইনস্টল করাও সহজ।
২। অ্যানালগ এবং ডিজিটাল উভয় ডেটা ট্রান্সমিশনে এ ক্যাবল ব্যবহৃত হয়।
৩। কম দূরত্বে যোগাযোগ করার জন্য এই ক্যাবল অত্যাধিক ব্যবহৃত হয়।
টুইস্টেড পেয়ার কেবলের অসুবিধাসমূহঃ
১। এ ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করে ১০০ মিটারের বেশি দূরত্বে ডেটা প্রেরণ করা কষ্টকর।
২। ট্রান্সমিশন লস অনেক বেশি হয়ে থাকে।
টুইস্টেড পেয়ার কেবলের ব্যবহারঃ
১। টেলিফোন লাইনে এই ক্যাবল ব্যবহৃত হয়।
২। LAN এর ক্ষেত্রে অত্যাধিক ব্যবহৃত হয়।
কো-এক্সিয়েল ক্যাবল
দুটি বিদ্যুৎ পরিবাহী ও অপরিবাহী স্তরের সাহায্যে এ ক্যাবল তৈরি করা হয়। এই ক্যাবলে দুটি বিদ্যুৎ পরিবাহী স্তর একই অক্ষ বরাবর থাকে বলে একে কো-এক্সিয়াল ক্যাবল বলা হয়। ভেতরের পরিবাহী তারটি কপার ওয়্যার যার মধ্য দিয়ে তড়িৎ সিগন্যাল প্রবাহিত হয়। ভেতরের পরিবাহী ও বাইরের পরিবাহী তারকে পৃথক রাখার জন্য এদের মাঝখানে অন্তরক পদার্থ হিসেবে ফোমের ইন্সুলেশন ব্যবহার করা হয় এবং বাইরের পরিবাহী তারকে প্লাস্টিকের জ্যাকেট দ্বারা ডেকে রাখা হয়। সাধারনত BNC কানেক্টর দিয়ে এই ধরণের ক্যাবল কানেকশন দেওয়া হয়।

কো-এক্সিয়েল ক্যাবলের অংশ সমূহঃ
কো-এক্সিয়েল ক্যাবল দুই প্রকার। যথাঃ
থিননেট(thinnet)ঃ
পুরুত্ব ঃ ০.২৫ ইঞ্চি
ট্রান্সমিশন ডিসটেন্স ঃ ১৮৫ মিটার (রিপিটার ছাড়া)
ট্রান্সমিশন স্পীড ঃ ১০Mbps
থিকনেট(thicknet) ঃ
পুরুত্ব ঃ ০.৫ ইঞ্চি
ট্রান্সমিশন ডিসটেন্স ঃ 500 মিটার(রিপিটার ছাড়া)
ট্রান্সমিশন স্পীড ঃ ১০Mbps
কো-এক্সিয়াল ক্যাবেলের সুবিধাসমূহঃ
১। এই ধরনের ক্যাবলের ট্রান্সমিশন লস অপেক্ষাকৃত কম হয়।
২। ডেটা স্থানান্তরের গতি বেশি।
৩। অ্যানালগ এবং ডিজিটাল উভয় ডেটা ট্রান্সমিশনে এ ক্যাবল ব্যবহৃত হয়।
৪। টুইস্টেড পেয়ার কেবল অপেক্ষা এ ক্যাবলের মাধ্যমে অধিক দূরত্বে তথ্য পাঠানো যায়।
৫। এটি ফাইবার অপটিক ক্যাবল অপেক্ষা কম ব্যয়বহুল এবং সহজে বহনযোগ্য।
কো-এক্সিয়াল ক্যাবলের অসুবিধাসমূহঃ
১। ডেটা ট্রান্সফার রেট নির্ভর করে তারের দৈর্ঘ্যের উপর।
২। কো-এক্সিয়াল ক্যাবল টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল অপেক্ষা কিছুটা ব্যয়বহুল।
কো-এক্সিয়াল ক্যাবলের ব্যবহারঃ
১। টেলিভিশন নেটওয়ার্ক
২। ডিশ টিভি বা ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক
৩। সিসি টিভি নেটওয়ার্ক
৪। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে বহুল ব্যবহৃত হয়।
ফাইবার অপটিক ক্যাবল
এই ক্যাবল কতোগুলো ফাইবারের সমন্বয়ে তৈরি। ফাইবারগুলো কাঁচ অথবা প্লাস্টিকের তৈরি এক ধরনের ডাই-ইলেকট্রিক (অন্তরক) পদার্থ দ্বারা তৈরি,যা আলো পরিবহনে সক্ষম। অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে অতি দ্রুত ডেটা প্রেরণ করা যায়। অপটিক্যাল ফাইবারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালের পরিবর্তে আলোক বা লাইট সিগন্যাল ট্রান্সমিট করে। অপটিক্যাল ফাইবার কাঁচের তন্তু হওয়ায় তড়িৎ চৌম্বক প্রভাব হতে মুক্ত। বর্তমানে যেসব অপটিক্যাল ফাইবার পাওয়া যায় তার ডেটা ট্রান্সমিশন হার ১০০ mbps থেকে ২ gbps। SC-কানেক্টর, ST-কানেক্টর, MT-RJ-কানেক্টর এর সাহায্যে ডিভাইসের সাথে কানেকশন দেওয়া হয়।

ফাইবার অপটিক ক্যাবলের বিভিন্ন অংশ
কোরঃ ভিতরের ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ যা প্রধানত সিলিকা, প্লাস্টিক ও অন্যান্য উপাদানের মিশ্রনে তৈরি হয়ে থাকে। যার ব্যাস ৮-১০০ মাইক্রন হয়ে থাকে।
ক্ল্যাডিঃ কোরকে আবদ্ধ করে রাখা বাইরের ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ যা আলোর প্রতিফলন করতে পারে।
বাফারঃ তন্তুকে বাইরের পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
জ্যাকেটঃ এক বা একাধিক তন্তুকে ক্যাবলের মধ্যে ধারণ করে।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের প্রকারভেদঃ
কোরের গঠন অনুসারে ফাইবার অপটিক ক্যাবল দু ধরণের। যথাঃ
১. সিঙ্গেলমোড ফাইবার অপটিক ক্যাবল
২. মাল্টিমোড ফাইবার অপটিক ক্যাবল
সিঙ্গেলমোড ফাইবার অপটিক ক্যাবল
এই ক্যাবলে একসাথে কেবল একটি আলোক সংকেত প্রেরণের পথ থাকে। কোরের ব্যাস ৮-১০ মাইক্রোন হয়ে থাকে। দীর্ঘ দূরত্বে ডেটা পাঠানোর ক্ষেত্রে উপযোগী। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও টেলিফোন কম্পানিতে ব্যবহৃত হয়।
মাল্টিমোড ফাইবার অপটিক ক্যাবল
এই ক্যাবলে একসাথে একাধিক আলোক সংকেত প্রেরণের পথ থাকে। কোরের ব্যাস ৫০-১০০ মাইক্রোন হয়ে থাকে। সল্প দূরত্বে ডেটা পাঠানোর ক্ষেত্রে উপযোগী। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে ডেটা এবং অডিও/ভিডিও এর প্রেরণ ব্যবহৃত হয়।
মাল্টিমোড ফাইবার অপটিক ক্যাবল আবার দুই প্রকার। যথাঃ
১. স্টেপ ইনডেক্স মাল্টিমোডঃ কোরের প্রতিসরাঙ্ক সর্বত্র সমান হয়।
২. গ্রেডেড ইনডেক্স মাল্টিমোডঃ কোরের প্রতিসরাঙ্ক কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে কমতে থাকে।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের বৈশিষ্ট্যঃ
১। অত্যধিক উচ্চ গতিতে ডেটা ট্রান্সমিট করতে পারে।
২। এটি ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনালের পরিবর্তে আলোক বা লাইট সিগন্যাল ট্রান্সমিট করে।
৩। অতি স্বচ্ছতা।
৪। রাসায়নিক সুস্থিরতা বা নিষ্ক্রিয়তা
৫। এতে আলোকের পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলন পদ্ধতিতে ডেটা উৎস থেকে গন্তব্যে গমন করে।
৬। শক্তির অপচয় রোধ।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সুবিধাঃ
১। আয়তনে ছোট, ওজনে হালকা ও সহজে পরিবহনযোগ্য।
২। সহজে প্রক্রিয়াকরণ করা যায়।
৩। শক্তির অপচয় কম।
৪। বিদ্যুৎ চৌম্বক প্রভাব হতে মুক্ত।
৫। ডেটা আদান-প্রদান নির্ভুল।
৬। পরিবেশের তাপ-চাপ ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
৭। ডেটা সংরক্ষণের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সবচেয়ে বেশি।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের অসুবিধাঃ
১। ফাইবার অপটিক ক্যাবলকে U আকারে বাঁকানো যায় না।
২। ফাইবার অপটিক ক্যাবল অত্যন্ত দামি।
৩। ফাইবার অপটিক ক্যাবল ইনস্টল করা অন্যান্য ক্যাবলের চেয়ে তুলনামূলক কঠিন।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ব্যবহারঃ
১। নেটওয়ার্কের ব্যাকবোন হিসেবে ফাইবার অপটিক ক্যাবল অধিক ব্যবহৃত হয়।
২। বর্তমানে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে আলোকসজ্জা, সেন্সর ও ছবি সম্পাদনের কাজ করা হয়।
মোঃ আবু সাঈদ
প্রভাষক (আইসিটি)
একজন দক্ষ, উদ্ভাবনী এবং প্রযুক্তি-বান্ধব আইসিটি শিক্ষক, যিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তি জ্ঞানের বিকাশ এবং ব্যবহারিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। কম্পিউটার বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল লিটারেসি এবং আধুনিক সফটওয়্যার/হার্ডওয়্যার প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানে অভিজ্ঞ। শিক্ষার্থীদের বয়স ও শ্রেণি অনুযায়ী উপযোগী পাঠ পরিকল্পনা তৈরি এবং বাস্তবভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনায় দক্ষ। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং, গুগল ও মাইক্রোসফট অ্যাপ্লিকেশন, PHP, C/C++, JavaScript, পাইথন, এইচটিএমএল/সিএসএস সহ বিভিন্ন ডিজিটাল টুল ও প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে পারদর্শী।
সাজানো-গুছানো এবং কোয়ালিটিফুল ক্লাস কন্টেন্ট দ্বারা অফলাইন অথবা অনলাইনে এইচএসসি ও আলিম শিক্ষার্থীদের আইসিটি কোচিং করানো হয়।
Poralekha24.com: স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য Lecture Sheet, MCQ/CQ, Presentation ও অনলাইন ও অফলাইন কোচিং সেবা।
কপিরাইট © ২০২৫ - ২০২৫ Poralekha24.com. সকল অধিকার সংরক্ষিত।