+88 01737 325759
info@poralekha24.com
হোম » লেকচারসমূহ » দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠ-৭ঃ মোবাইল যোগাযোগ

দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠ-৭ঃ মোবাইল যোগাযোগ



সেলুলার ফোনের ইতিহাস শুরু হয় ১৯২০ সালে, মোবাইল রেডিও আবিস্কারের পর। ১৯৪০ সালে মার্টিন কুপার মটোরলা (সিলিকন ভ্যালি কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা) আধুনিক মোবাইল ফোন আবিস্কার করেন। তাই তাকে মোবাইল ফোনের জনক বলা হয়। এই সময় হতে যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইল ফোন শুরু হয়। পরে ১৯৫০ সালে ইউরোপ ও ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালিন সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সর্বপ্রথম মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করে।

ইংরেজী শব্দ "Move" থেকে মোবাইল ফোন শব্দটি এসেছে। শব্দটির বাংলা অর্থ সরানো, নাড়ানো, চলমান। তাই চলমান অবস্থায় তারবিহীন যে সকল ফোন ব্যবহার করা হয় তাকে মোবাইল ফোন বলে। মোবাইল ফোন হলো এক ধরণের ইলেকট্রনিক ডিভাইস যার সাহায্যে সেলুলার নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উভয়মুখী বা দ্বিমুখী টেলিযোগাযোগ করা যায়। মোবাইল ফোনকে অনেক সময় সেলুলার ফোন, সেলফোন বা হ্যান্ড ফোনও বলা হয়।

দুটি চলনশীল ডিভাইস অথবা একটি চলনশীল ও অন্যটি স্থির ডিভাইসের মধ্যে ডেটা ও তথ্য আদান প্রদান করার লক্ষ্যে ডিজাইনকৃত সিষ্টেমকে মোবাইল টেলিফোন সিস্টেম বলে। চলমান ডিভাইসকে মোবাইল স্টেশন বা মোবাইল সেট এবং স্থির ডিভাইসকে Land Unit  বলা হয়।

সেলুলার টেলিফোন হলো এক ধরণের শর্ট-ওয়েভ অ্যানালগ বা ডিজিটাল টেলিযোগাযোগ যেখানে কোনো গ্রাহকের একটি মোবাইল ফোন থেকে কাছাকাছি অবস্থিত কোন ট্রান্সমিটারের মধ্যে ওয়ারলেস সংযোগ থাকে। ট্রান্সমিটারের কভারেজ এরিয়াকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা হয়। এর প্রতিটি ভাগকে বলে সেল। সেলুলার রেডিও সিষ্টেমে রেডিও সার্ভিসের সাথে ভূমি এলাকায় সিগনাল বা সংকেত সরবরাহ করা হয় যা নিয়মিত আকারের সেলে বিভক্ত। সেল ষড়ভুজাকার, বর্গাকার, বৃত্তাকার বা অন্য কোন অনিয়মিত আকারের হতে পারে। যদিও ষড়ভুজাকারই প্রথাগত।

সেল সিগন্যাল এনকোডিংঃ বিভিন্ন ট্রান্সমিটার থেকে প্রেরিত সিগন্যালগুলো আলাদা করার জন্য ব্যবহৃত এনকোডিং পদ্ধতিকে বলা হয় সেল সিগন্যাল এনকোডিং। সেল সিগন্যাল এনকোডিং এর প্রকারভেদঃ
   ১. FDMA- Frequency Division Multiple Access
   ২. TDMA- Time Division Multiple Access
   ৩. CDMA- Code Division Multiple Access

মোবাইল ফোন প্রযুক্তির প্রকারভেদঃ বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল ফোন প্রযুক্তিকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
   ১. GSM- Global System For Mobile Communication.
   ২. CDMA- Code Division Multiple Access.
 
জিএসএম (GSM)
GSM হল TDMA (Time Division Multiple Access) এবং FDMA (Frequency Division Multiple Access) এর সম্মিলিত একটি চ্যানেল অ্যাকসেস পদ্ধতি। এই প্রযুক্তিতে মোবাইল ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে উচ্চগতির প্রযুক্তি GPRS(General Packet Radio Service) এবং EDGE(Enhanced Data Rate for GSM Evolution) ব্যবহৃত হয়।

জিএসএম (GSM) এর বৈশিষ্ট্যসমূহ
   ১. সেল কভারেজ এরিয়া ৩৫ কি.মি.।
   ২. বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি (২ ওয়াট)।
   ৩. ডেটা ট্রান্সফার রেট তুলনামূলক কম (৫৬kbps)।
   ৪. আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা আছে।
   ৫. ব্যবহৃত SIM কার্ড সহজলভ্য এবং যেকোন হ্যান্ডসেটে ব্যবহারের করা যায়।
 
সিডিএমএ (CDMA)
এই প্রযুক্তিতে ডেটা পাঠানো হয় ইউনিক কোডিং পদ্ধতিতে। CDMA যে পদ্ধতিতে ডেটা আদান-প্রদান করে তাকে স্প্রেড স্পেকট্রাম বলা হয়। এটি একাধিক ব্যবহারকারীকে একই ফ্রিকোয়েন্সির ব্যান্ড শেয়ার করার সুবিধা দিয়ে থাকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন কম হওয়ায় এই প্রযুক্তিকে গ্রীণফোন প্রযুক্তি বলা হয়। মোবাইল অপারেটর সিটিসেল এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

সিডিএমএ (CDMA) এর বৈশিষ্ট্যসমূহ
   ১. সেল কভারেজ এরিয়া ১১০ কি.মি.।
   ২. বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
   ৩. ডেটা ট্রান্সফার রেট তুলনামূলক বেশি (154kbps-614 kbps)।
   ৪. আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা নেই।
   ৫. ব্যবহৃত RUIM কার্ড যেকোন হ্যান্ডসেটে ব্যবহারের করা যায়।



মোবাইল ফোনের বিভিন্ন প্রজন্ম
মোবাইল ফোনের ক্রবর্ধমান ব্যবহার ও উন্নয়নের  এক একটি পর্যায় বা ধাপকে মোবাইল ফোনের প্রজন্ম নামে অবিহিত করা হয়। এ পর্যন্ত আবিস্কৃত মোবাইল ফোনের চারটি প্রজন্মে ভাগ করা যায়। নিচে এসব প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
 
প্রথম প্রজন্ম (১৯৭৯-১৯৯০) 
   ১। এই প্রজন্মে এনালগ পদ্ধতির রেডিও সিগন্যাল ব্যবহৃত হয়।
   ২। সেল সিগন্যাল এনকোডিং হলো  FDMA।
   ৩। সিগন্যাল ফ্রিকোয়েন্সি তুলনামুলক কম।
   ৪। কথোপকথন চলা অবস্থায় ব্যবহারকারীর অবস্থানের পরিবর্তন হলে ট্রান্সমিশন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
   ৫। এতে মাইক্রোপ্রসেসর ও সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।
   ৬। একই এলাকায় অন্য মোবাইল ট্রান্সমিটারের দ্বারা সৃষ্ট রেডিও ইন্টারফারেন্স নেই।
   ৭। আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা চালু ছিলো না।

দ্বিতীয় প্রজন্ম (১৯৯১-২০০০) 
   ১। এই প্রজন্মে ডিজিটাল পদ্ধতির রেডিও সিগনাল ব্যবহৃত হয়।
   ২। সেল সিগন্যাল এনকোডিং হলো  FDMA, TDMA, CDMA
   ৩। সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি এবং মাইক্রোওয়েভ ডিভাইসের অগ্রগতির ফলে মোবাইল কমিউনিকেশনে ডিজিটাল ট্রান্সমিশন সম্ভব হয়।
   ৪। উন্নত মানের অডিও এর জন্য ডিজিটাল মডুলেশন ব্যবহৃত হয়।
   ৫। ডেটা স্থানান্তরের গতি অনেক বেশী।
   ৬। ডেটার প্রতারনা রোধে সহায়তা করে।
   ৭। সর্বপ্রথম প্রিপেইড পদ্ধতি চালু হয়।
   ৮। সীমিতমাত্রায় আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা চালু হয়।
   ৯। মোবাইল ডেটা ন্থানান্তরের জন্য প্যাকেট সুইচ নেটওয়ার্ক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
 ১০। এমএমএস(MMS) ও এসএমএস(SMS) সেবা কার্যক্রম চালু হয়।
 ১১। জিএসএম পদ্ধতিতে ডেটা ও ভয়েস প্রেরন করা সম্ভব হয়।
 ১২। কথোপকথন চলা অবস্থায় ব্যবহারকারীর অবস্থানের পরিবর্তন হলে ট্রান্সমিশন অবিচ্ছিন্ন থাকে।
 ১৩। ক্ষেত্র বিশেষে অন্য মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের ট্রান্সমিটারের দ্বারা সৃষ্ট রেডিও ইন্টারফারেন্স হয়।

তৃতীয় প্রজন্ম (২০০১-২০০৮)
   ১। ডেটা স্থানান্তরে প্যাকেট সুইচিং ও সার্কিট সুইচিং উভয় পদ্ধতিই ব্যবহৃত হয়। তবে প্যাকেই সুইচিং পদ্ধতির সাহায্যে খুব দ্রুত ছবি ও ভয়েস আদান প্রদান করা হয়।
   ২। মডেম সংযোজনের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং ডেটা আদান প্রদানের নতুন এক মাত্রা যোগ হয়।
   ৩। EDGE  পদ্ধতি কার্যকর হয়। ফলে অধিক পরিমান ডেটা স্থানান্তর হয়।
   ৪। ডেটা স্থানান্তরের গতি 2 Mbps এর অধিক।
   ৫। মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স ইত্যাদি সেবা কার্যক্রম চালু হয়।
   ৬। আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা চালু হয়।

চতুর্থ প্রজন্ম (২০০৯-বর্তমান ) 
   ১। 4G এর গতি 3G এর চেয়ে প্রায় 50 গুন বেশী। এর প্রকৃত ব্যান্ড উইথ 10 Mbps আশা করা হচ্ছে।
   ২। টেলিভিশনের অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের ছবি এবং ভিডিও লিংক প্রদান করবে।
   ৩। আইপি নির্ভর ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক সিস্টেম কাজ করবে।

মোঃ আবু সাঈদ

মোঃ আবু সাঈদ

প্রভাষক (আইসিটি)

একজন দক্ষ, উদ্ভাবনী এবং প্রযুক্তি-বান্ধব আইসিটি শিক্ষক, যিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তি জ্ঞানের বিকাশ এবং ব্যবহারিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। কম্পিউটার বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল লিটারেসি এবং আধুনিক সফটওয়্যার/হার্ডওয়্যার প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানে অভিজ্ঞ। শিক্ষার্থীদের বয়স ও শ্রেণি অনুযায়ী উপযোগী পাঠ পরিকল্পনা তৈরি এবং বাস্তবভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনায় দক্ষ। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং, গুগল ও মাইক্রোসফট অ্যাপ্লিকেশন, PHP, C/C++, JavaScript, পাইথন, এইচটিএমএল/সিএসএস সহ বিভিন্ন ডিজিটাল টুল ও প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে পারদর্শী।

আইসিটি কোচিং সেন্টার

banner image

সাজানো-গুছানো এবং কোয়ালিটিফুল ক্লাস কন্টেন্ট দ্বারা অফলাইন অথবা অনলাইনে এইচএসসি ও আলিম শিক্ষার্থীদের আইসিটি কোচিং করানো হয়।

আমাদের সম্পর্কে

Poralekha24.com: স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য Lecture Sheet, MCQ/CQ, Presentation ও অনলাইন ও অফলাইন কোচিং সেবা।

কপিরাইট © ২০২৫ - ২০২৫ Poralekha24.com. সকল অধিকার সংরক্ষিত।