মোবাইল ফোন প্রযুক্তির প্রকারভেদঃ বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল ফোন প্রযুক্তিকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. GSM- Global System For Mobile Communication.
২. CDMA- Code Division Multiple Access.
GSM হল TDMA (Time Division Multiple Access) এবং FDMA (Frequency Division Multiple Access) এর সম্মিলিত একটি চ্যানেল অ্যাকসেস পদ্ধতি। এই প্রযুক্তিতে মোবাইল ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে উচ্চগতির প্রযুক্তি GPRS(General Packet Radio Service) এবং EDGE(Enhanced Data Rate for GSM Evolution) ব্যবহৃত হয়।
১. সেল কভারেজ এরিয়া ৩৫ কি.মি.।
২. বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি (২ ওয়াট)।
৩. ডেটা ট্রান্সফার রেট তুলনামূলক কম (৫৬kbps)।
৪. আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা আছে।
৫. ব্যবহৃত SIM কার্ড সহজলভ্য এবং যেকোন হ্যান্ডসেটে ব্যবহারের করা যায়।
এই প্রযুক্তিতে ডেটা পাঠানো হয় ইউনিক কোডিং পদ্ধতিতে। CDMA যে পদ্ধতিতে ডেটা আদান-প্রদান করে তাকে স্প্রেড স্পেকট্রাম বলা হয়। এটি একাধিক ব্যবহারকারীকে একই ফ্রিকোয়েন্সির ব্যান্ড শেয়ার করার সুবিধা দিয়ে থাকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন কম হওয়ায় এই প্রযুক্তিকে গ্রীণফোন প্রযুক্তি বলা হয়। মোবাইল অপারেটর সিটিসেল এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
১. সেল কভারেজ এরিয়া ১১০ কি.মি.।
২. বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
৩. ডেটা ট্রান্সফার রেট তুলনামূলক বেশি (154kbps-614 kbps)।
৪. আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা নেই।
৫. ব্যবহৃত RUIM কার্ড যেকোন হ্যান্ডসেটে ব্যবহারের করা যায়।
মোবাইল ফোনের বিভিন্ন প্রজন্ম
মোবাইল ফোনের ক্রবর্ধমান ব্যবহার ও উন্নয়নের এক একটি পর্যায় বা ধাপকে মোবাইল ফোনের প্রজন্ম নামে অবিহিত করা হয়। এ পর্যন্ত আবিস্কৃত মোবাইল ফোনের চারটি প্রজন্মে ভাগ করা যায়। নিচে এসব প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
প্রথম প্রজন্ম (১৯৭৯-১৯৯০)
১। এই প্রজন্মে এনালগ পদ্ধতির রেডিও সিগন্যাল ব্যবহৃত হয়।
২। সেল সিগন্যাল এনকোডিং হলো FDMA।
৩। সিগন্যাল ফ্রিকোয়েন্সি তুলনামুলক কম।
৪। কথোপকথন চলা অবস্থায় ব্যবহারকারীর অবস্থানের পরিবর্তন হলে ট্রান্সমিশন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
৫। এতে মাইক্রোপ্রসেসর ও সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।
৬। একই এলাকায় অন্য মোবাইল ট্রান্সমিটারের দ্বারা সৃষ্ট রেডিও ইন্টারফারেন্স নেই।
৭। আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা চালু ছিলো না।
দ্বিতীয় প্রজন্ম (১৯৯১-২০০০)
১। এই প্রজন্মে ডিজিটাল পদ্ধতির রেডিও সিগনাল ব্যবহৃত হয়।
২। সেল সিগন্যাল এনকোডিং হলো FDMA, TDMA, CDMA
৩। সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি এবং মাইক্রোওয়েভ ডিভাইসের অগ্রগতির ফলে মোবাইল কমিউনিকেশনে ডিজিটাল ট্রান্সমিশন সম্ভব হয়।
৪। উন্নত মানের অডিও এর জন্য ডিজিটাল মডুলেশন ব্যবহৃত হয়।
৫। ডেটা স্থানান্তরের গতি অনেক বেশী।
৬। ডেটার প্রতারনা রোধে সহায়তা করে।
৭। সর্বপ্রথম প্রিপেইড পদ্ধতি চালু হয়।
৮। সীমিতমাত্রায় আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা চালু হয়।
৯। মোবাইল ডেটা ন্থানান্তরের জন্য প্যাকেট সুইচ নেটওয়ার্ক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
১০। এমএমএস(MMS) ও এসএমএস(SMS) সেবা কার্যক্রম চালু হয়।
১১। জিএসএম পদ্ধতিতে ডেটা ও ভয়েস প্রেরন করা সম্ভব হয়।
১২। কথোপকথন চলা অবস্থায় ব্যবহারকারীর অবস্থানের পরিবর্তন হলে ট্রান্সমিশন অবিচ্ছিন্ন থাকে।
১৩। ক্ষেত্র বিশেষে অন্য মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের ট্রান্সমিটারের দ্বারা সৃষ্ট রেডিও ইন্টারফারেন্স হয়।
তৃতীয় প্রজন্ম (২০০১-২০০৮)
১। ডেটা স্থানান্তরে প্যাকেট সুইচিং ও সার্কিট সুইচিং উভয় পদ্ধতিই ব্যবহৃত হয়। তবে প্যাকেই সুইচিং পদ্ধতির সাহায্যে খুব দ্রুত ছবি ও ভয়েস আদান প্রদান করা হয়।
২। মডেম সংযোজনের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং ডেটা আদান প্রদানের নতুন এক মাত্রা যোগ হয়।
৩। EDGE পদ্ধতি কার্যকর হয়। ফলে অধিক পরিমান ডেটা স্থানান্তর হয়।
৪। ডেটা স্থানান্তরের গতি 2 Mbps এর অধিক।
৫। মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স ইত্যাদি সেবা কার্যক্রম চালু হয়।
৬। আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা চালু হয়।
চতুর্থ প্রজন্ম (২০০৯-বর্তমান )
১। 4G এর গতি 3G এর চেয়ে প্রায় 50 গুন বেশী। এর প্রকৃত ব্যান্ড উইথ 10 Mbps আশা করা হচ্ছে।
২। টেলিভিশনের অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের ছবি এবং ভিডিও লিংক প্রদান করবে।
৩। আইপি নির্ভর ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক সিস্টেম কাজ করবে।