+88 01737 325759
info@poralekha24.com
হোম » লেকচারসমূহ » প্রথম অধ্যায় পাঠ-৮ঃ বায়োইনফরমেটিক্স ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং

প্রথম অধ্যায় পাঠ-৮ঃ বায়োইনফরমেটিক্স ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং



বায়োইনফরমেটিক্স

বায়োইনফরমেটিক্স হলো বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যেখানে কম্পিউটার প্রযুক্তি, ইনফরমেশন থিওরি এবং গাণিতিক জ্ঞানকে ব্যবহার করে বিভিন্ন বায়োলজিক্যাল ডেটা এনালাইসিস করা হয়। বায়োইনফরমেটিক্সে জীন তথা DNA সংক্রান্ত গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত ডেটাগুলো (ডিএনএ সিকোয়েন্স, জিন, এমিনো অ্যাসিড এবং নিউক্লিক অ্যাসিড ইত্যাদি) ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তিতে কম্পিউটার প্রযুক্তি, ইনফরমেশন থিওরি এবং গাণিতিক জ্ঞানকে ব্যবহার করে এই ডেটাগুলো এনালাইসিস করে বিভিন্ন বায়োলজিক্যাল সমস্যার সমাধান এবং নতুন টুলস তৈরি করা হয়। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞানী ডোনাল্ড নুথ(Donald Knuth) সর্বপ্রথম বায়োইনফরমেটিক্সের ধারণা দেন।


বায়োইনফরমেটিক্স এর উদ্দেশ্য

১।  জৈবিক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুধাবন করা। অর্থাৎ জীন বিষয়ক তথ্যানুসন্ধান করে জ্ঞান তৈরি করা।

২।  রোগ-বালাইয়ের কারণ হিসেবে জীনের প্রভাব সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করা।

৩।  ঔষধের গুণাগুণ উন্নত ও নতুন ঔষধ আবিষ্কারের প্রচেষ্টা করা।

 

একটি বায়োইনফরমেটিক্স টুলস তিনটি প্রধান প্রক্রিয়া করে থাকে

১।  ডিএনএ সিকোয়েন্স প্রোটিন সিকোয়েন্স নির্ণয় করে (DNA sequence determines protein sequence )

২।  প্রোটিন সিকোয়েন্স প্রোটিন গঠন/ কাঠামো নির্ণয় করে (Protein sequence determines protein structure)

৩।  প্রোটিন গঠন/ কাঠামো প্রোটিনের কাজ নির্ণয় করে (Protein structure determines protein function)

 

বায়োইনফরমেটিক্স এর ব্যবহার

১।  প্যাটার্ন রিকগনিশন

২।  ডেটা মাইনিং

৩।  মেশিন ল্যাংগুয়েজ  অ্যালগোরিদম

৪।  ভিজুয়ালাইজেশন

৫।  সিকুয়েন্স এলাইনমেন্ট

৬।  ডিএনএ ম্যাপিং

৭।  ডিএনএ এনালাইসিস

৮।  জিন ফাইন্ডিং

৯।  জিনোম সমাগম

১০।  ড্রাগ নকশা

১১।  ড্রাগ আবিস্কার

১২। প্রোটিনের গঠন

 

বায়োইনফরমেটিক্সে ব্যবহৃত ওপেনসোর্স সফটওয়্যার সামগ্রী

Bioconductor, BioPerl, Biopython, BioJava, BioRuby, Biclipse, EMBOSS,Taverna Workbench, UGENE ইত্যাদি।





জেনেটিক  ইঞ্জিনিয়ারিং

জীব অর্থাৎ প্রাণী বা উদ্ভিদের ক্ষুদ্রতম একক হলো কোষ। কোষের প্রাণকেন্দ্রকে নিউক্লিয়াস বলা হয়। নিউক্লিয়াসের ভিতরে বিশেষ কিছু পেঁচানো বস্তু থাকে যাকে ক্রোমোজোম বলা হয়। ক্রোমোজোমের মধ্যে আবার চেইনের মত পেঁচান কিছু বস্তু থাকে যাকে DNA(Deoxyribo Nucleic Acid) বলা হয়। এই DNA অনেক অংশে ভাগ করা থাকে। এক একটি নির্দিষ্ট অংশকে জীন বলা হয়। এই জীন প্রাণী বা উদ্ভিদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে। অর্থাৎ প্রাণী বা উদ্ভিদের বিকাশ কীভাবে হবে, আকৃতি কীরুপ হবে তা কোষের DNA সিকোয়েন্সে সংরক্ষিত থাকে।

কোন জীব থেকে একটি নির্দিষ্ট জিন বহনকারী DNA খন্ড পৃথক করে ভিন্ন একটি জীবে স্থানান্তরের কৌশলকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলা হয়। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-কে জেনেটিক মডিফিকেশন (genetic modification /manipulation-GM) ও বলা হয়। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় তাকে রিকম্বিনেন্ট DNA (DeoxyriboNucleic Acid) – প্রযুক্তি বা জিন ক্লোনিং বলা হয়।  ১৯৭২ সালে Paul Berg বানরের ভাইরাস SV40 ও  lambda virus এর DNA এর সংযোগ ঘটিয়ে বিশ্বের প্রথম রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ অণু তৈরি করেন। এই জন্য Paul Berg কে জেনেটিক  ইঞ্জিনিয়ারিং এর জনক বলা হয়।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাহায্যে কোষের জেনেটিক কাঠামো পরিবর্তন করে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কোষ তৈরি করা যায়। যেমনঃ ধরা যাক একটি আমের জাত উচ্চফলনশীল কিন্তু স্বাদে মিষ্টি কম। অপরদিকে অপর একটি আমের জাত কমফলনশীল কিন্তু স্বাদে অনেক মিষ্টি। এক্ষেত্রে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাহায্যে উচ্চফলনশীল আমের জিনের সাথে মিষ্টি আমের জিনের সংমিশ্রণে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উচ্চফলনশীল ও মিষ্টি আম উৎপন্ন করা যায়।


রিকমবিনেন্ট DNA প্রযুক্তির ধাপসমূহ

১।  DNA নির্বাচন

২।  DNA এর বাহক নির্বাচন

৩।  DNA খণ্ড কর্তন

৪।  খণ্ডনকৃত DNA প্রতিস্থাপন

৫।  পোষকদেহে রিকম্বিনেন্ট DNA স্থানান্তর

৬।  রিকম্বিনেন্ট DNA এর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মূল্যায়ন।  


জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যবহার

এই প্রযুক্তি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কৃষি খাতে। কৃষি গবেষণায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই পর্যন্ত অনেক ট্রান্সজেনিক ফসল  আবিষ্কার করা হয়েছে। তার মধ্যে উন্নত প্রজাতির ধান উল্লেখযোগ্য। এই প্রযুক্তির সুষ্ঠ ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের খাদ্য সমস্যা অনেকটা দূর করা সম্ভব। এছাড়া নিম্ল লিখিত কাজে ব্যবপভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যথাঃ

১।  শস্যের গুণাগুণ মান বৃদ্ধি করা

২।  শস্য থেকে সম্পূর্ণ নতুন উপাদান উৎপাদন করা

৩।  পরিবেশের বিভিন্ন ধরণের হুমকি থেকে শস্যকে রক্ষা করা

৪।  শস্যের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো

এই রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি সবচেয়ে সফলভাবে আমূল পরিবর্তন এনেছিল ইনসুলিন উৎপাদনে।  আমরা জানি যে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনসুলিন একটা অপরিহার্য উপাদান।  ইনসুলিন মানুষের অগ্ন্যাশয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন।  ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের এই হরমোনটি কম থাকে বলে, তাদের কৃত্রিমভাবে ইনসুলিন নিতে হয়।  তো, আগে রোগীদের জন্য এই ইনসুলিন সরবরাহ করা হতো শূকর থেকে।  শূকর হত্যা করে ইনসুলিন সংগ্রহ করতে হতো তখন।

এরপর রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে ইনসুলিন উৎপাদন শুরু হয়।  এক্ষেত্রে ইকোলাই ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে কম খরচে অধিক পরিমাণ ইনসুলিন উৎপাদন সম্ভব হয়।  এই প্রক্রিয়ায়, মানুষের শরীরের ইনসুলিন উৎপাদনকারী জিনটি এনজাইম দ্বারা কর্তন করে ইকোলাই ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএতে স্থাপন করা হয় এবং ল্যাবরেটরিতে ইলোকাই ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তার করানো হয়। ওই ট্রান্সজেনিক ইকোলাই ব্যাকটেরিয়াগুলোই ইনসুলিন উৎপাদন করে।

এছাড় উন্নতমানের ফসল উৎপাদন, রোগের চিকিৎসা, হরমোন তৈরি, ভাইরাসনাশক, মৎস্য উন্নয়ন, ফারমাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদন, টিকা ও জ্বালানি তৈরি, জেনেটিক ত্রুটিসমূহ নির্ণয়, পরিবেশ সুরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে।


জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষতিকর দিকগুলো
১।  রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ  যদি কোন কারণে ক্ষতিকর হয়ে পড়ে তাহলে এর প্রভাবে জীব জগতে বিপর্যয় নেমে আসবে।
২।  নিবেশিত জিন যদি ক্ষতিকর প্রোটিন সংশ্লেষণ করে তাহলে ক্যান্সার সহ নতুন রোগ হতে পারে।

মোঃ আবু সাঈদ

মোঃ আবু সাঈদ

প্রভাষক (আইসিটি)

একজন দক্ষ, উদ্ভাবনী এবং প্রযুক্তি-বান্ধব আইসিটি শিক্ষক, যিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তি জ্ঞানের বিকাশ এবং ব্যবহারিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। কম্পিউটার বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল লিটারেসি এবং আধুনিক সফটওয়্যার/হার্ডওয়্যার প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানে অভিজ্ঞ। শিক্ষার্থীদের বয়স ও শ্রেণি অনুযায়ী উপযোগী পাঠ পরিকল্পনা তৈরি এবং বাস্তবভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনায় দক্ষ। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং, গুগল ও মাইক্রোসফট অ্যাপ্লিকেশন, PHP, C/C++, JavaScript, পাইথন, এইচটিএমএল/সিএসএস সহ বিভিন্ন ডিজিটাল টুল ও প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে পারদর্শী।

আইসিটি কোচিং সেন্টার

banner image

সাজানো-গুছানো এবং কোয়ালিটিফুল ক্লাস কন্টেন্ট দ্বারা অফলাইন অথবা অনলাইনে এইচএসসি ও আলিম শিক্ষার্থীদের আইসিটি কোচিং করানো হয়।

আমাদের সম্পর্কে

Poralekha24.com: স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য Lecture Sheet, MCQ/CQ, Presentation ও অনলাইন ও অফলাইন কোচিং সেবা।

কপিরাইট © ২০২৫ - ২০২৫ Poralekha24.com. সকল অধিকার সংরক্ষিত।